বন্যা অপরিবর্তিত ৪ জেলায় বগুড়ায় অবনতি।
বন্যা অপরিবর্তিত ৪ জেলায় বগুড়ায় অবনতি
পানিতে ডুবে দুই জেলায় দুই শিশুর মৃত্যু
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
২৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০
কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, শেরপুর ও নওগাঁয় সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তিস্তার পানি কমা-বাড়ার মধ্যে থাকলেও নীলফামারীতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
যমুনা ও বাঙ্গালী নদীতে পানি বেড়ে বগুড়ার তিন উপজেলায় বন্যার অবনতি হয়েছে। নওগাঁয় পানি কমতে শুরু করলেও এরই মধ্যে তিন হাজার হেক্টর জমির সবজি ও অন্যান্য ফসল বিনষ্ট হয়েছে। ভেসে গেছে আবাদি মাছ। বগুড়ার ধুনটে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
বন্যা আক্রান্ত ২৮ জেলার মধ্যে বিশেষ করে ১২টিতে শিশু ও গবাদি পশুর খাদ্যসংকট প্রকট। এ সংকট মোকাবেলায় তাত্ক্ষণিক কোনো উদ্যোগ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হলেও গত তিন দিনেও তা মাঠপর্যায়ে পৌঁছায়নি। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা বাড়িয়ে দিয়েছে বন্যার্তদের দুর্ভোগ। আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন বিস্তারিত।
বগুড়া : উজানের ঢলে যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি পুনরায় বিপত্সীমা অতিক্রম করায় বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ১২টি ইউনিয়ন। ভেঙে গেছে এসব এলাকার রাস্তাঘাট। সদ্য লাগানো রোপা আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজিক্ষেত। ভেসে গেছে জলাশয় ও পুকুরের মাছ।
যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে গতকাল সন্ধ্যায় বিপত্সীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বাঙ্গালী নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার কমলেও বিপত্সীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে।
এদিকে গতকাল বন্যার পানিতে ডুবে দুলালী খাতুন (২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে ধুনটের নিমগাছি ইউনিয়নের বেড়েরবাড়ী গ্রামের দুলু মিয়ার মেয়ে।
কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি সামান্য কমলেও কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সেতু পয়েন্টে ধরলা বিপত্সীমার ৫১ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির প্রবল চাপে সদর উপজেলার সারডোব, বাংলাবাজার, বাংটুরঘাট এবং উলিপুরের নাগরাকুড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
নীলফামারী : তিস্তার পানি বাড়া-কমার মধ্যে থাকলেও জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরেক দফা উন্নতি হয়েছে। গতকাল বিকেল ৩টায় ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা বিপত্সীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে গত বুধবার রাতে ওই পয়েন্টে নদীর পানি বিপত্সীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এ সময় ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তাবেষ্টিত প্রায় ১৫টি গ্রামের ১৫ সহস্রাধিক মানুষ নতুন করে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে।
গাইবান্ধা : ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়ার পানি গতকাল সামান্য কমলেও জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র গতকালও বিপত্সীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।
এদিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দহবন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ ধুমাইটারি গ্রামের মংলু রবিদাসের শিশুসন্তান জয়ন্ত রবিদাস (৮ মাস) গতকাল সবার অজান্তে হামাগুড়ি দিয়ে পানিতে পড়ে ডুবে যায়। পরে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।
নওগাঁ : জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির গতকাল পর্যন্ত তেমন উন্নতি হয়নি। আত্রাই ও ছোট যমুনা এ দুই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে সম্প্রতি জেলার মান্দা, ধামইরহাট, আত্রাই ও রানীনগর উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়।
শেরপুর : পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে গতকাল বিকেল ৩টার দিকে ২৪ ঘণ্টায় দুই সেন্টিমিটার কমেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে বন্যার পানি আবার বাড়তে পারে।
No comments